ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে এক মাইলফলক সিনেমার নাম ‘রঙিন রূপবান’। এ ছবি দিয়ে সারাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পান চিত্রনায়ক সাত্তার। তিনি গতকাল না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টায় নারায়ণগঞ্জে নিজ বাসায় এ অভিনেতা মারা যান। এ তথ্য নিশ্চিত করেন প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। নায়ক সাত্তার দীর্ঘদিন ধরেই সিনেমায় অনিয়মিত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি অভিনয় করেছিলেন এফ আই মানিকের ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু’ ছবিতে। এতে সাত্তার ছিলেন দীঘির বাবার চরিত্রে।
সাত্তারের স্ত্রী কাকলী জানান, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে তিনবার ব্রেনস্টোকে আক্রান্ত হন চিত্রনায়ক সাত্তার। তারপর থেকে তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান। পাশাপাশি একাধিক রোগ তার শরীরে ভর করে। বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে সাত্তার বিছানায় পড়ে ছিলেন। বছর ছয়েক আগে প্রধানমন্ত্রী তাকে ৩০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। সেই টাকায় চিকিৎসা ও সংসার চলতো সাত্তারের।
চলচ্চিত্রে সাত্তারের প্রথম উপস্থিতি ১৯৬৮ সালে। লোকজ গল্পের সিনেমায় তিনি দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন। ইবনে মিজানের ‘আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী’ ছবিতে শিশুশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার নায়ক হয়ে ওঠার ঘটনা আরো পরে।
আশির দশকে ইবনে মিজানের পরিচালনায় রূপকথাভিত্তিক ‘পাতাল বিজয়’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে সূচনা হয় রোমান্টিক এ নায়কের। ছবিটি ব্যবসা সফল হওয়ার পর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে কাজ করেন কাজী হায়াৎ-এর ‘পাগলী’ ছবিতে। তবে প্রধান চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৮৪ সালে আলমগীর পিকচার্সের ‘রঙ্গিন রূপবান’ ছবিতে। এ ছবিতে অভিনয় করে দর্শকহৃদয়ে নিজেকে পাকাপোক্ত স্থান করে নেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাত্তারকে। এরপর একে একে পোশাকি সিনেমার শক্তিমান অভিনেতা আবদুস সাত্তার অভিনয় করেন রঙ্গীন রাখাল বন্ধু,আজিজুর রহমানের ‘অরুন বরুণ কিরণ মালা’,‘কাঞ্চন মালা’,ইবনে মিজানের ‘পাতাল বিজয়’,চাষী নজরুল ইসলামের ‘শুভদা’,মিলন চৌধুরীর ‘রঙ্গিন সাত ভাই চম্পা’, আলো মতি প্রেম কুমার,মধুমালা মদন কুমার,সাগরকন্যা,শীষমহল,ঝড় তুফান,ঘরভাঙ্গা সংসার,জেলের মেয়ে রোশনীসহ সাত্তার অভিনীত চলচ্চিত্র সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। নায়ক হিসেবে সাত্তার ছিলেন সুদর্শন,স্টাইলিশ ও রোমান্টিক। রুপালি পর্দায় তাকে দেখতে একসময় হুমড়ি খেয়ে পড়তেন সিনেমার দর্শকেরা। সেই সময় চিত্রনায়িকা শাবানা থেকে শুরু করে অলিভিয়া,রোজিনা, অঞ্জু, জিনাত, কবিতা, রানীসহ অনেক সুপার হিট চিত্রনায়িকার সাথে দাপুটে অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে সাড়া ফেলেছিলেন আবদুস সাত্তার।
বাংলা সিনেমার পাশাপাশি টিভি নাটকেও অভিনয় করেছিলেন এই অভিনেতা। জীবিত অবস্থায় তাহার একমাত্র দুঃখ ছিল অভিনয় শিল্পিদের পাশে না পাওয়া। তিনি মনে করতেন সারাটা জীবন তিনি অভিনয়ের সাথে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন অথচ সেই অভিনয় জগতের মানুষগুলোকে কেমন যেন অচেনা মনে হয়েছে সবচেয়ে বিপদে থাকা অবস্থায়। তার মৃত্যুতে সিনেমাপাড়ায় শোক নেমে এসেছে। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় পারিবারিক গোরস্থানে নায়ক সাত্তারকে দাফন করা হবে।